সর্বশেষ খবর:

আগামী ১১/০৩/২০২৫ থেকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে  
মেনু নির্বাচন করুন

প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার গৌরব, বীরত্ব লাভ সবার ভাগ্যে জুটে না। এই অনন্য সুযোগ জীবনে একবারই এসে ছিল। সারা বাংলার প্রায় সাত কোটি মানুষের একমাত্র আকাঙ্খা ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা,আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কারীর সংখ্যাও গুটি কয়েক,তাদের আত্মত্যাগ কষ্টের ফসলে আজকের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার, তারা বাঙ্গালী জাতির অহংকার। তারা স্বাধীন বাংলার সূর্য সন্তান, তাদের অস্তিত্বে মিশে থাকবে দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে,লাল সবুজের পতাকায়....

তারই মত কক্সবাজারের ইতিহাসে যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে তাদের একজন চকরিয়া উপজেলার মাতমুহুরী নদীর তীরঘেষে গড়ে উঠা লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী। ছোটকালে মেধাবী শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী ছিলেন অন্যায়ের জোর প্রতিবাদকারী। মৃত্যুর পরও মানুষের অন্তরে তাঁর জায়গা অটুট রয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার পর তার নামে গঠন করা হয়েছেবীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী কল্যাণ ট্রাষ্ট

কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ১ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪সালে জম্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মনিরুজ্জামান এবং মাতার নাম মরহুমা জীবন খাতুন। জম্মেপর থেকে মাতামুহুরীর পাড়ে বেড়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর শৈশব জীবন, শৈশবকালে তিনি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে মাতামুহুরী নদীতে গোসল করতে ভালবাসতেন। তাঁর সারাটা জীবন কেটেছে সাধারণ মানুষে পক্ষে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে।

তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ১১নং সেক্টরের মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের অধীনে প্রথমে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নেন।

পরে ভারত থেকে আরো উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি শারীরিকভাবে মারাত্বক ভাবে আহত হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে যুদ্ধে আবারোও ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধকালিন সময় সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অলি আহমদকে যুদ্ধাহত অবস্থায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের টেকনাফে নিরাপদে সুরক্ষিত রাখে।

এছাড়াও সাবেক মন্ত্রী এমআর সিদ্দিককে যুদ্ধাহত অবস্থায় নিজের শরীর থেকে রক্ত দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। যুদ্ধকালিন সময় তিনি এফএফ গ্রুপ নং- এর কমান্ডার হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারই পরের বছর ১৯৭৪ সালে চকরিয়া থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে। তিনি ওই কমিটির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারে নিমর্মভাবে হত্যাকান্ডের পর তৎকালিন স্বৈরশাসকের রোষানলে পড়ে র্দীঘদিন তিনি কারাভোগ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সহপরিবারকে নিমর্মভাবে হত্যাকান্ডের পর ১৭ই আগষ্ট তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময় তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। পরে জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তিনি মুক্তি লাভ করে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠিত হলে তিনি সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করে। এরই পরের বছর ১৯৯৭ সালে কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার (তথ্য প্রচারের) দায়িত্ব পালন করে। ১৯৯৮ সালে তিনি লক্ষ্যারচরের আমজাদিয়া রফিকুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮সালে কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার (সাংগঠনিক) পদে নির্বাচিত এবং মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্তএই দায়িত্ব পালন করেন।

 

২০১০ সালে কক্সবাজার জেলায় সর্ব প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী ছিলেনও তিনি। বর্তমানে মামলাটি ট্রাইবুনাল বিচারাধীন। ২০১১ সালে নিজ এলাকায় চকরিয়া আউডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১৪ সালে ১১ মার্চ এক বিকেলে ৬০বছর বয়সে চকরিয়া তথা পুরো কক্সবাজারবাসী কাঁদিয়ে সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ মৃত্যুবরণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী মৃত্যুতে পুরো কক্সবাজারবাসীর মাঝে সুখের ছায়া নেমে আসে।

 

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, পাঁচ ছেলে তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুনাগ্রাহী রেখে গেছেন। পরে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার জানাযায় চকরিয়া কলেজে মাঠে লক্ষ্যাচরের সর্ব বৃহৎ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

 

এদিকে তার স্ত্রী নাম আলহাজ¦ নেচারা বেগম। তিনি একজন সমাজ সেবিকা। তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের টানা পাঁচবার প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বকালে তিনি সুনামের সাথে কাজ করে গেছেন।

 

এছাড়াও তিনি আওয়ামী মহিলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে। তিনি চকরিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভানেত্রী লক্ষ্যারচরের মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী।

তার স্মৃতি স্মরণে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী কল্যান ট্রাস্ট,মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

Top